ঢাকা ২৬ জুন, ২০২৫
সংবাদ শিরোনাম
“প্লাস্টিক দূষণ আর নয়, বন্ধ করার এখনই সময়”—কেন্দুয়ায় বিশ্ব পরিবেশ দিবস পালিত সড়ক সংস্কারের দাবীতে ৫ গ্রামের লোকের মানববন্ধন ঢাকার পশুহাটে শেকৃবির ইন্টার্ন ভেটেরিনারি ডাক্তারদের চিকিৎসাসেবা শালিখায় যৌথ বাহিনীর অভিযানে আগ্নেয়াস্ত্র সহ আটক তিন বকশীগঞ্জে জিয়া পরিবারের ছবি অবমাননার অভিযোগ জিয়াউর রহমানের ৪৪তম শাহাদাত বার্ষিকী উপলক্ষে রামপালে দোয়া মাহফিল ও ত্রাণ বিতরণ বটিয়াঘাটায় মৎসজীবীদের নিয়ে জনসচেতনতা মূলক সভা অনুষ্ঠিত কুষ্টিয়ায় রাসেল ভাইপার সাপের কামড়ে দুজনের মৃত্যু সেনাবাহিনীর অভিযানে শীর্ষ সন্ত্রাসী সুব্রত বাইন ও মোল্লা মাসুদসহ গ্রেফতার ৪ মানিকগঞ্জে অবৈধভাবে বালু উত্তোলনকালে বিএনপি নেতাসহ আটক ২৪

কুড়িগ্রামে মাদক-হত্যাসহ বিভিন্ন মামলার আসামিদের নির্বাচন

#

নয়ন দাস,কুড়িগ্রাম প্রতিনিধিঃ

০৫ জানুয়ারি, ২০২২,  10:02 AM

news image

মাদক কারবারের জড়িত অনেকে রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলায় নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।স্থানীয়দের আশঙ্কা, চিহ্নিত এসব মাদককারবারিরা নির্বাচিত হলে তাদের এলাকায় মাদক নির্মূল দূরে থাক, উল্টো মাদকের বিস্তার আরও বাড়বে। এতে মাদকসেবীর সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক অপরাধ বৃদ্ধি পাবে।


রাত পোহালেই পঞ্চম ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে (ইউপি) কুড়িগ্রামের রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার ৬টি ইউনিয়নে ভোট।এ সব ইউনিয়নে চেয়ারম্যান ও সদস্য পদে যারা নির্বাচনে লড়ছেন তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন প্রার্থী রয়েছেন, যারা সরকারি বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃংখলা বাহিনীর মাদক কারবারিদের তালিকায় রয়েছেন।


জানা গেছে, কোনো কোনো প্রার্থী সরাসরি জড়িত না হলেও তাদের পরিবার-আত্মীয় স্বজনদের মধ্যে কেউ না কেউ এই মাদক কারবারের জড়িত। অনেকের নামে গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি স্থানীয় থানাতেও হত্যাসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে।


তালিকাভুক্ত চিহ্নিত এসব মাদককারবারিরা এ নির্বাচনে চেয়ারম্যানসহ অন্যান্য পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।


তবে কেউ কেউ জনগণের কাছে ক্ষমা চেয়ে এই অবৈধ ব্যবসা না করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।


অনুসন্ধানে জানা গেছে, সরকারি একটি বিশেষ সংস্থার তথ্য অনুযায়ী- রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলা সীমান্তকেন্দ্রিক মাদক কারবারিদের তালিকায় রৌমারীর ১৬৮ জন এবং রাজিবপুরের ২৩ জনের নাম রয়েছে।


তালিকাভুক্তদের মধ্যে রৌমারী উপজেলার সদর ইউনিয়নে ৭ নম্বর ওয়ার্ডে সদস্য পদে লড়ছেন বাওয়ের গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল খালেক। তার নামে রৌমারী থানায় মাদকদ্রব্য আইনে মামলা রয়েছে। এ ছাড়া গোয়েন্দা সংস্থার মাদক কারবারিদের তালিকার ২৫ নম্বরে রয়েছে তার নাম।


৪ নম্বর ওয়ার্ডের রতনপুর গ্রামের শাহ আলমও সদস্য পদে নির্বাচনে করছেন। গোয়েন্দা সংস্থার মাদক কারবারিদের তালিকায় তিনি রয়েছেন ২১ নম্বরে।এই তালিকায় রয়েছেন একই ওয়ার্ডে সদস্য পদপ্রার্থী চর বামনেরচর গ্রামের এনামুল হক সরকারও। তালিকায় তার নাম ১৬২ নম্বর। তার নামেও রৌমারী থানায় মাদক দ্রব্য আইনে মামলা আছে।


একই ইউনিয়নের ১ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য পদপ্রার্থী রবিউল করিমের নামেও রৌমারী থানায় মাদক মামলা রয়েছে।


সদস্য পদে আরও নির্বাচন করছেন যাদুর চর ইউনিয়নের ৯ নম্বর ওয়ার্ডের উত্তর আলগার চর গ্রামের হায়দার আলী, সায়দাবাদ গ্রামের লায়লা খাতুন। এর মধ্যে হায়দার হত্যা মামলার আসামি। তার নাম আছে মাদক কারবারির তালিকায়ও। আর লায়লা খাতুনসহ তার স্বামী সালাম মিয়ার নামে মাদক মামলা রয়েছে।


শৌলমারী ইউনিয়নের চর বোয়ালমারী গ্রামের স্বতন্ত্র চেয়ারম্যান প্রার্থী ইউনুছ খান (ক্বারী) গোয়েন্দা সংস্থার মাদক কারবারির তালিকার ১৪২ নম্বরে রয়েছে।


স্থানীয়দের আশঙ্কা, চিহ্নিত এসব মাদককারবারিরা নির্বাচিত হলে তাদের এলাকায় মাদক নির্মূল দূরে থাক, উল্টো মাদকের বিস্তার আরও বাড়বে। এতে মাদকসেবীর সংখ্যা বৃদ্ধির পাশাপাশি বিভিন্ন সামাজিক অপরাধ বৃদ্ধি পাবে।


নিউজবাংলাকে শৌলমারী ইউনিয়নের ভোটার আমজাদ বলেন, ‘ইউনুছ খান নামে তাকে কেউ চেনে বলে মনে হয় না। কেননা তাকে সবাই গাঁঞ্জা ক্বারী নামে চেনে। তিনি চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত হলে ঘরে ঘরে গাজার আসর বসবে।’


যাদুরচর ইউনিয়নের নহের আলী বলেন, ‘সালাম ও তার স্ত্রী লায়লা খাতুন দুজনই মাদক কারবারের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে জড়িত। এবার নির্বাচনে দাঁড়ানোর জন্য বাজারে মিটিংয়ে এই কারবার করবে না বলে কথা দিয়েছে।’আরেক ভোটার বক্কর বলেন, ‘এবারের নির্বাচনে মাদক কারবারি, হত্যা মামলার আসামিরাই দাঁড়াইছে। এতে করে সীমান্ত এলাকায় কীভাবে মাদক ব্যবসা বন্ধ হবে?’


ছাইফুল ইসলাম নামে একজন বলেন, ‘বর্তমান অনেক চেয়ারম্যান, মেম্বারসহ নতুন যারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছে তাদের মধ্যে বেশিরভাগই মাদক কারবার, চোরাচালনের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। প্রশাসন তাদের কাছে কিছুই না। প্রতিবাদ করতে গেলে উল্টো সাধারণ মানুষকে মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে দেয়। তাই আমরা অসহায়।’


রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘যাদের নামে হত্যা, মাদক, চোরাচালানসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে তারা যেনো নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে, সেজন্য ব্যবস্থা নেয়া দরকার। আগামীতে সীমান্ত এলাকায় মাদক কারবারিদের জন্য টিকে থাকাই কঠিন হয়ে যাবে।’এই বিষয়ে সদস্য প্রার্থী লায়লা খাতুন বলেন, ‘কার নামে মামলা নেই? রাজনীতি করলে এমন মামলা থাকবেই। আমি এগুলো নিয়ে ভয় পাই না। জনগণ আমার পাশে আছে। আমি নির্বাচিত হব।’


অভিযোগের বিষয়ে জানতে প্রতিবেদনে নাম আসা অন্য প্রার্থীদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি। একাধিকবার তাদের মোবাইলে ফোন দিলে ধরেননি। নিউজবাংলার পরিচয় দিয়ে মোবাইলে মেসেজ দেয়া হলেও তাদের সাড়া পাওয়া যায়নি।


কুড়িগ্রাম প্রেসক্লাবের সভাপতি আহাসান হাবীব নীলু নিউজবাংলাকে বলেন, ‘এসব মাদক কারবারিদের শক্ত সিন্ডিকেট রয়েছে। তারা নির্বাচনি আইনের ফাঁক-ফোকর দিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করার সুযোগ পাচ্ছেন। তাদের নিয়ন্ত্রণ করতে সরকারকেই কার্যকরি পদক্ষেপ নিতে হবে। তা না হলে আগামীতে এই জেলায় মাদক অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠবে।’এ ছাড়াও ভোটারদেরও দায়িত্ববোধ থেকে এসব অসাধু ব্যক্তিদের বয়কট করার আহবান জানান তিনি।


এসব বিষয়ে জেলা অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রুহুল আমিন বলেন, ‘মাদক নির্মূলে আমাদের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এখানে কাউকে ছাড়া দেবার সুযোগ নেই।’


নির্বাচনে মাদক কারবারিদের অংশ নেয়ার প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি এ বিষয়ে কথা বলতে রাজি হননি।

logo সম্পাদক ও প্রকাশক: মিরাজুন নুরিয়া